দেশের এই করোনা কালে চিকিৎসক সংকট একটি বড় সমস্যা। দেশের বেশির ভাগ হাসপাতাল গুলোতে সাধারন নিয়মে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ২৪ঘন্টা সেবা দিয়ে থাকেন। বর্তমানে করোনা আক্রান্ত হয়ে বা আইসোলেশন মেইনটেইন করতে গিয়ে চিকিৎসকের বড় একটা অংশ চাইলেও সেবা চালিয়ে যেতে পারেন না।কমে যাচ্ছে নিয়মিত কাজ করা চিকিৎসকের সংখ্যা । সরকার ইতিমধ্যে ২০০০ নতুন চিকিৎসক নিয়োগ দিলেও তাদের পোস্টিং মূলত করোনা বিশেষায়িত হাসপাতালগুলিতে। মেডিকেল কলেজ যেগুলি আছে সেগুলিতে এই নিয়োগের কোন সুফল এখনই পাওয়া যাচ্ছে না।অথচ প্রতিনিয়ত করোনা ব্যতীত অন্যান্য রোগির সেবা কার্যক্রমের জন্যও এখন স্বাভাবিক থেকেও হসপিটাল গুলিতে আরও বেশি জনবল প্রয়োজন।
মেডিকেল শিক্ষা ব্যবস্থার কারিকুলাম অনুযায়ী একজন মেডিকেল শিক্ষার্থী ৫বছর বিভিন্ন পরীক্ষার পর ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষায় পাশ করে ইন্টার্ন চিকিৎসক হিসেবে হাসপাতালে যোগদান করেন।নভেম্বর ২০১৯ এর ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নতুন চিকিৎসকগণ মে মাস থেকে কাজে যোগদান করেছেন।পরীক্ষার্থীদের একটা বড় অংশই দেখা যায় বিভিন্ন কারণে কখনও ভাগ্যের ফাদে পড়ে কোনো বিষয়ে ৬০% এর কম নাম্বার পায় বিধায় আবার সে বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হয়। উল্লেখ্য প্রতিটি বিষয়ের ৩টি আলাদা ভাগ থাকে যার প্রতিটিতেই কমপক্ষে ৬০% পেয়েই ক্লিয়ার করতে হয়,কোনটিতে কম পাওয়া মানেই আবার পুরো পরীক্ষাটি দিতে হয়।কিন্তুু বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে সাথে মেডিকেল কলেজগুলোও বন্ধ থাকার কারনে তাদের এই পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হতে পারছেনা। বর্তমানে ডাক্তার তৈরীর এ প্রক্রিয়াটি যদি ব্যহত হয় সামনের দিন গুলিতেও এর ভয়াবহ প্রভাব পড়তে যাচ্ছে।সেশন জটে পড়ে ভবিষ্যতে ডাক্তার সংকট প্রকট আকার ধারণ করার সম্ভাবনা রয়েছে।যেহেতু একটা মেডিকেল কলেজে সদ্য পাশকৃত ইন্টার্ন ডাক্তাররাই হসপিটালের প্রাণ সেহেতু অতি দ্রুততার সহিত আগের ব্যচের ফাইনাল এই পরীক্ষা নেয়ার ব্যাবস্থা করতে হবে,নয়তো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে ক্ষতিটা হবে জনগণের ক্ষতিটা হবে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার।
উল্লেখ্য চিকিৎসক নেতারা এক সময় বলেছিলেন প্রয়োজন হলে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের কাজে লাগাবেন।কিন্তু যেখানে একটা পরীক্ষা নিয়েই আমরা প্রায় ২৫০০ নতুন চিকিৎসক সেবা কাজে যোগদান করাতে পারি সেখানে কারিকুলামে কিছুটা পরিবর্তন এনে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা যায়। উন্নত বিশ্বে এমন উদাহরণ খুজলে অনেক পাওয়া যাবে।তাছাড়া প্রতিটি মেডিকেলে গড়ে ২০/৩০ জন শিক্ষার্থী এই পরীক্ষার অপেক্ষায় রয়েছেন,কোন কোন মেডিকেলে তারও কম। চাইলে সহজেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং উন্নত বিশ্বের মত “ডামি” ব্যবহার করেও বিশেষ ব্যবস্থায় পরীক্ষা নেয়া যায়। প্রয়োজন শুধু সংশ্লীষ্ট কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা।
কারিকুলামের মারপ্যাঁচে আটকে পড়া এমন শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা বলেনঃ
এই পরিস্থিতি অনেক কঠিন আমরা মানি, কিন্তু অনেকের জন্য কোর্স শেষ করেও ১বছর পিছানোটা (যেহেতু ৬ মাস পর এমনিই পরীক্ষায় বসার কথা থাকলেও হয় নি) তার ফ্যামিলির উপর অনেক বড় ধাক্কা। সবার পক্ষে এ ধাক্কা সামলানো অনেক কঠিন।
পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ভাইভাতেই আমরা হয়তো কম পেয়েছি, স্যার ম্যাডামরাই বলেন কয়েক মিনিটে কখনো একজন স্টুডেন্টকে জাজ করা হয় না,কারণ অনেকেই ভাইবাতে নার্ভাস হয়ে পড়ে। যদি কিছুটা শিথিল অবস্থায় এই ক্রান্তি লগ্নে আমাদের একটা পরীক্ষা নিয়ে দ্রুত ফলাফল প্রকাশ করে সেবা কাজে যোগদানের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে দেশ, হাসপাতাল, এবং বাকি ইন্টার্নদেরও উপকার হয়।
আমরা চাই দেশের এই ক্রান্তিকালে দেশের মানুষ কে সেবা করতে।বেঁচে থাকলে পরীক্ষা অনেক হবে এটা শুনতে নয়।বীরের মত নিজ পেশা দিয়ে মানুষের পাশে থেকেই মরতে চাই।কে জানে আজ বাসায় আছি বলে কি আমার করোনা কিংবা অন্য ভাবে মরণ হবে না? মৃত্যু অনিবার্য তবে নামের আগে ডাক্তার নিয়েই মরতে চাই,অন্তত লোকে যেন বলে সেবা দিতে গিয়ে মৃত্যুবরন করেছে।শুধু একটি সুযোগ চাই স্যার/ম্যাডামদের থেকে।স্যার ম্যাডামরা অনেক ঝুকি নিচ্ছেন,আমাদের জন্য সবসময় অনেক ত্যাগ স্বীকার করছেন,একটু কষ্ট হবে আপনাদের জানি,তবে এই সন্তানদের জন্য হলেও একটি বার বিবেচনার অনুরোধ রইল।
এছাড়াও শিক্ষার্থীরা এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী এবং স্বাস্থমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
প্রতিদিনবিডি২৪/বিলকিস খানম
বর্তমান পপরিস্থিতিতে এসব হবু ডাক্তারদের পরীক্ষার ফর্মালিটির কাজ দ্রুত শেষ করে পূর্ণ ডাক্তার রূপে পরিণত করে কাজে লাগালে স্বাস্থ্য পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হবে বলে মনে করি।
বি,সি,এস পাশ করে ৩৯ নন ক্যাডার সহকারী সার্জন ও সহকারী ডেন্টাল সার্জনরা নিয়োগ পাচ্ছে না। নতুন করে পরীক্ষা কেন?
এতটা স্বার্থপর হওয়া উচিত নয়।এরা ডাক্তার হলে শুধু সরকারী বিভাগ ছাড়াও বেসরকারী ভাবেও কিছু না কিছু সেবা মানুষ পাবে।
সেবার উৎপাদন বাড়ানো পৃথিবীর কোথাও কোনো ক্ষতির কারন নয়,তবে সেবার পথ বন্ধ রাখাই ক্ষতি।