অনলাইন ডেস্ক ;
বাসে অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই এবং বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে জরিমানা করা হয়েছে।
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থেকে ঢাকাগামী ইমাম পরিবহনের একটি বাসে যাত্রা করছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এনামুল হাসান। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ সতর্কতায় স্বাস্থ্যবিধি অনুসারে তিনি সরকার নির্ধারিত বর্ধিত ভাড়া দিয়ে টিকিট করেন। নিয়ম অনুযায়ী, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের জন্য প্রতি দুই আসনে একজন করে যাত্রী পরিবহনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে বাস পরিবহনে। তবে বাসটি ফুলপুর পর্যন্ত আসতেই সুপারভাইজার অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই করে প্রায় সব আসন পূর্ণ করে ফেলেন।
ঘটনাটি গতকাল রোববারের।
কয়েকজন যাত্রী অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাইয়ের প্রতিবাদ করলে উচ্চ স্বরে দুর্ব্যবহার শুরু করেন চালক ও সুপারভাইজার। যাত্রীদের বাস থেকে নামিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। এ রকম তর্কাতর্কির মধ্যে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে বাসটি চলতে থাকে এবং কয়েক মিনিট পর বাসটি তারাকান্দা বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছায়। এখানেও আরও কয়েকজন অতিরিক্ত যাত্রী তোলা হয় বাসটিতে।
অগত্যা ৯৯৯–এ ফোন করে সমস্যার কথা জানান এনামুল। ৯৯৯ থেকে অভিযোগ শুনে বাসটির অবস্থান জানতে চাওয়া হয়। এনামুল জানান, বাসটি তারাকান্দা বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান করছে। কথোপকথন শেষ হতে না–হতেই বাসটির চাকা ঘুরতে থাকে এবং ঠিক এর দুই মিনিট পর তারাকান্দা থানার সামনে বাসটি পৌঁছানোমাত্র কয়েকজন পুলিশ সদস্য গাড়িটির গতিরোধ করেন। পুলিশ বাসে উঠে অভিযোগের সত্যতা পায়। এ সময় চালক এবং সুপারভাইজারকে বাস থেকে নামিয়ে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
এ বিষয়ে তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের জানান, জাতীয় হেল্পলাইন থেকে ফোন পাওয়ামাত্র দুই মিনিটের মধ্যেই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পরে চালক ও সুপারভাইজারকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়ার পর তাঁরা ক্ষমা চেয়ে অঙ্গীকারনামা দিলে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় অন্য বাসচালকদেরও সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।
তবে এনামুলের মতো ময়মনসিংহ অঞ্চলের আরও অনেক যাত্রী এমন ভুক্তভোগী। যাত্রীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ১৬০ শতাংশ ভাড়া নেওয়া হলেও দুই আসনের বিপরীতে এক আসনেই পাশাপাশি বসে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে অধিকাংশ যাত্রীকে। আজ সোমবার সকালে সরেজমিনে ময়মনসিংহের পাটগুদাম ব্রিজ মোড় এবং মাসকান্দা বাইপাস মোড়ে বাসে অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাইয়ের চিত্র দেখা গেছে।
সোলায়মান শেখ নামের ঢাকাগামী এক যাত্রী বলেন, তিনি দুই আসনের জন্য নির্ধারিত ভাড়ায় শাহজালাল পরিবহনের বাসে উঠলেও তাঁকে এক আসনে বসিয়ে পাশের আসনে আরও একজন যাত্রীকে বসানো হয়। এ সময় প্রতিবাদ করলে সুপারভাইজার ও চালকের সহকারী যাত্রীদের অকথ্য ভাষায় জবাব দেন। পরে অনিয়ম সহ্য করেই তিনিসহ অন্য যাত্রীরা ঢাকা যেতে বাধ্য হন।
এ ব্যাপারে বাসের চালক ও সুপারভাইজারদের প্রশ্ন করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তাঁরা কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা মোটর মালিক সমিতির কোচ বিভাগের সম্পাদক সোমনাথ সাহা বলেন, কিছু কিছু অভিযোগ তিনি শুনেছেন। তবে এটি খুবই কম। বেশির ভাগ বাসই সরকারি বিধি মেনে চলছে বলে দাবি করেন তিনি। আর দু–একটি অভিযোগের ব্যাপারে প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আয়শা হক প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে তৎপর রয়েছে জেলা প্রশাসন। বিভিন্ন উপজেলা ও মহাসড়কে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
প্রতিদিনবিডি২৪/সাইকা;
Leave a Reply