প্রধানমন্ত্রীর শান্তির বার্তা নিয়ে দু’গ্রুপের সঙ্গে নোয়াখালী আ.লীগ সভাপতির বৈঠক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘শান্তির বার্তা’ নিয়ে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের বিবদমান দুগ্রুপের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ এএইচএম খায়রুল আনাম চৌধুরী সেলিম।
রোববার সকালে বসুরহাটের মেয়র আবদুল কাদের মির্জার সঙ্গে তার বড় রাজাপুরের বাড়িতে এবং প্রতিপক্ষ উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে দলের মুখপাত্র সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ভাগনে মাহবুবুর রশিদ মঞ্জুর কেজি স্কুল রোডের বাসায় সাক্ষাৎ করেন।
সাক্ষাতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ এএইচএম খায়রুল আনাম চৌধুরী সেলিম।
তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমি দেখা করেছি। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় বিবদমান আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী আমার মাধ্যমে নানা নির্দেশনা দিয়েছেন। সেটি জানাতেই উভয় পক্ষের সঙ্গে এ সাক্ষাৎ করি।
তিনি জানান, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার দলীয় বিবদমান দুই গ্রুপের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াকিবহাল আছেন। তিনি (শেখ হাসিনা) উভয়পক্ষকে শান্ত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। অচিরেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নোয়াখালী জেলা ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ব্যাপারে তার সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানাবেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের মুখপাত্র সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ভাগনে মাহবুবুর রশিদ মঞ্জু জানান, নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ খায়রুল আনম সেলিম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বার্তা নিয়ে আমাদেরকে শান্ত থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু আমরা তাকে (নোয়াখালী জেলা সভাপতি) বলেছি, প্রতিনিয়ত কাদের মির্জা তার বাহিনী দিয়ে আমাদের নিরীহ নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে আহত, বাড়ি-বাড়ি গিয়ে হামলা, লুটপাট চালাচ্ছে। এ অবস্থায় সমঝোতা কিভাবে হবে?
এদিকে নোয়াখালীর রাজনৈতিক অঙ্গনে সর্বত্র গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে যে, খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ হারাচ্ছেন নোয়াখালী-৪ এর এমপি একরামুল করিম চৌধুরী। নোয়াখালী জেলার সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে এ ধরনের আলোচনা বিরাজমান রয়েছে।
একই বিষয়ে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা নিশ্চিত করে বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের একটি গ্রহণযোগ্য কমিটি উপহার দিচ্ছেন। তবে দলীয় হাই কমান্ডের নির্দেশনা মোতাবেক ওই কমিটিতে এমপি একরামুল করিম চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক পদে রাখা হচ্ছে না। তাকে বাদ দিয়েই হচ্ছে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি, এমনটি দাবি করেছেন তিনি।
কাদের মির্জা আরও বলেন, কোনো নেতার পরিবর্তন নয়, অপরাজনীতির অবসান চাই।
নোয়াখালী জেলায় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সফল উত্থানে এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর অবদানের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, দলীয় পদ ও এমপি হয়ে তার অপরাজনীতি, দুর্নীতি এবং অপকর্ম সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এসব কারণে দলের সব পর্যায়ের নেতারা তাকে দলীয় সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বাদ দেয়ার জন্য একাট্টা হয়েছে। দলীয় হাই কমান্ডের সিদ্ধান্তেই তাকে বাদ দেয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিমের বিষয়ে দলীয় সভানেত্রী পজিটিভ আছেন। নতুন কমিটি হবে সম্পূর্ণ সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজ মুক্ত। বড় ভাই দলীয় সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশেই তিনি এখন রাজনীতি করছেন। বড় ভাই ও ভাবির সঙ্গে তার (কাদের মির্জা) এখন আর কোনো বিরোধ নেই। তবে কিছু কিছু ভুলক্রটির বিষয়ে বলতে গিয়ে বড় ভাইয়ের (ওবায়দুল কাদের) বিরুদ্ধেও কোনো কোনো কথা বলতে হয়েছে। বড় ভাই ওবায়দুল কাদেরও কোনো অন্যায় করলে, কোনো ছাড় নেই বলে তিনি আবারও হুঁশিয়ারি দেন।
কাদের মির্জা বলেন, নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনে দল চাইলে আমি সব ধরনের সহযোগিতা করবো। তবে আমি কোনো পদ-পদবী চাই না, কোনো কিছুর লোভও আমার নেই।
দলীয় সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বাদ পড়ার বিষয়টি দলীয়, রাজনৈতিক সর্বমহলে আলোচনা, তোলপাড় সৃষ্টি হলে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লে নিজের ফেসবুক লাইভে এসে নিজেই মুখ খুললেন এমপি একরামুল করিম চৌধুরী।
তিনি বলেন, ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। আমি তো ২৫ বছর চালিয়েছি, তিনবার এমপিগিরি করছি। আমি আপনাদের নেতা। আপনাদের ভোটে তিনবার এমপি নির্বাচিত হয়েছি। আর নির্বাচনী এলাকায় মানুষদের সেবা করতে আমার কোনো পোস্ট (পদ) লাগে না। আমি আপনাদের পাশে ছিলাম এবং ভবিষ্যতেও থাকব।
এদিকে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়ে নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র শহীদল্লাহ খান সোহেল, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শিহাব উদ্দিন শাহীন, চৌমুহনী পৌরসভার সাবেক মেয়র আকতার হোসেন ফয়সাল, বেগমগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহনাজ বেগমসহ জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাত করেন।
প্রসঙ্গত, গত ছয় মাস কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সহিংসতায় দুজন নিহত হয়েছেন। অনেক নেতাকর্মী আহত হয়ে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এসব ঘটনায় থানায় অন্তত ৪০টি মামলা ও আদালতে বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। গ্রেফতারও হয়েছেন শতাধিক নেতাকর্মী। এখনও অনেক নেতাকর্মী কারাগারে আটক রয়েছেন।
সুত্রঃ যুগান্তর
প্রতিদিনবিডি২৪/ডেস্ক;
Leave a Reply