দুর্নীতির মামলায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চার সদস্যকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সোমবার বিকালে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কেএম ইমরুল কায়েশ এ আদেশ দেন। এছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আসামিদের একদিন জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশও দেওয়া হয়েছে। কারাগারে পাঠানো আসামিরা হলেন এমএ কাশেম, বেনজীর আহমেদ, রেহানা রহমান ও মোহাম্মদ শাহজাহান।
গতকাল দুপুর পৌনে ২টার দিকে শাহবাগ থানা পুলিশ আসামিদের আদালতে হাজির করে। শুনানি শুরুর আগ পর্যন্ত তাদের ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। বিকাল ৩টার পর তাদের এজলাসে তোলা হয়।
আদালতে আসামিদের পক্ষে অ্যাডভোকেট শাহিনুর ইসলাম ও বোরহানউদ্দিন বয়স, অসুস্থতা, সামাজিক মর্যাদা বিবেচনায় ডিভিশনের আবেদন করেন। শুনানিতে তারা বলেন, আসামিরা শিক্ষা, শিল্পসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশ্বে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে একটা মামলা হয়েছে। আমরা মামলার মেরিটে যেতে চাই না। আমরা তাদের জামিন আবেদনও করিনি। তবে তারা যেন কারাগারে একটু আরামে থাকতে পারেন, এজন্য ডিভিশনের আবেদন করছি। অপরদিকে দুদকের পক্ষে আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক মো. ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী আসামিদের একদিন জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান। আমরা জিজ্ঞাসাবাদের আদেশের প্রার্থনা করছি। এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, তথ্য-উপাত্ত জেনেই মামলা করা হয়েছে। এখন জিজ্ঞাসাবাদের কোনো প্রয়োজন নেই। জিজ্ঞাসাবাদের নামে এখন হয়রানি করা হবে। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আসামিদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এছাড়া জেলকোড অনুযায়ী ডিভিশনের আদেশ দেন এবং আদেশ পাওয়ার সাত কার্যদিবসের মধ্যে যে কোনো একদিন জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন।
এর আগে রোববার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চে আগাম জামিন আবেদন করেন এই আসামিরা। জামিন আবেদন খারিজ করে হাইকোর্ট তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেন। শাহবাগ থানা পুলিশকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের নিম্ন আদালতে হাজির করতে বলা হয়। এরপর রাত ১১টার দিকে তাদের থানায় নেওয়া হয়।
উচ্চ আদালত শুনানিকালে বলেন, অর্থ পাচার ও দুর্নীতি হত্যার চেয়ে বিপজ্জনক অপরাধ। একটি হত্যা একজন ব্যক্তি বা পরিবার বা সমাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। কিন্তু অর্থ পাচার ও দুর্নীতি দেশ এবং জাতিকে ধ্বংস করে দিতে পারে।
প্রায় ৩০৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত ৫ মে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। অপর আসামিরা হলেন বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য এমএ কাশেম, বেনজীর আহমেদ, রেহানা রহমান, মোহাম্মদ শাহজাহান ও আশালয় হাউজিং অ্যান্ড ডেভেলপার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আমিন মো. হিলালী। মামলায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ডেভেলপমেন্টের নামে ৯ হাজার ৯৬ দশমিক ৮৮ ডেসিম্যাল জমির ক্রয়মূল্য বাবদ ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ ১৩ হাজার ৪৯৭ টাকা অতিরিক্ত অর্থ হস্তান্তর, রূপান্তর, স্থানান্তর ও গোপন করার মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় অর্থাৎ সরকারের সুপারিশ/অনুমোদনকে পাশ কাটিয়ে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের কিছু সদস্যের অনুমোদনের মাধ্যমে এই অর্থ লোপাট করা হয়। এছাড়া নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্যদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির আরও অভিযোগ রয়েছে। সেসব অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে।
প্রতিদিনবিডি২৪/আজাদ;
Leave a Reply