শওগাত আলী সাগর
বীকনের করোনার ওষুধই বলি আর গণস্বাস্থ্যের কিটই বলি- কোনোটাই নতুন কিছু নয়।
জাপানের অ্যাভিগন নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় যখন উচ্ছ্বাস শুরু হয়- তখন ‘করোনার চিকিৎসা হিসেবে পরীক্ষিত এবং অনুমোদিত নয়’- এমন একটি ওষুধের প্রচারণা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলাম। অথচ জাপানে সরকারিভাবে তখন পরীক্ষামূলকভাবে এটির ব্যবহার হচ্ছিল- এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এটির ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছিল। চূড়ান্তভাবে অনুমোদনের আগে বিশেষ করে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্যানেলের ভ্যালিডেশনের আগে এটিকে করোনার কার্যকর ওষুধ হিসেবে প্রচারণার ব্যাপারে আমাদের আপত্তি ছিল এবং আমরা তার তুমুল প্রতিবাদ করেছি।
বিকন, বেক্সিমকো এই ওষুধটি উৎপাদনের ঘোষণাও দিয়েছিল।
বাংলাদেশের বাস্তবতায় রাজনৈতিকভাবে এই দুটি গ্রুপের মালিকরাই অত্যন্ত শক্তিশালী। সরকারি দলের এমপি কিংবা প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার মালিকানায় থাকা কোনো কোম্পানির কোনো পণ্য বাজারজাত করা নিয়ে বা সরকারের অনুমোদন পাওয়া নিয়ে তেমন কোনো সমস্যা হওয়ারই কথা না। কিন্তু পরীক্ষার আগে, আন্তর্জাতিকভাবে করোনার ওষুধ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার আগে এটি বাংলাদেশের বাজারজাতের ব্যাপারে আমাদের আপত্তি ছিল।
সেই আপত্তির স্বপক্ষে ফেসবুকারদের যে খুব বেশি সমর্থন ছিল তাও নয়। এই ওষুধটির অনুমোদনের পক্ষেও কেউ তেমন উচ্চবাচ্চ করেনি। অসংখ্য মানুষ এই ওষুধ নিয়ে তাদের স্বস্তি প্রকাশ করেছিলেন। তা সত্বেও ওষুধ প্রশাসন বলে দিয়েছে- এটিকে করোনার ওষুধ হিসেবে প্রচার করা যাবে না।
বীকন ফার্মা তাদের ওষুধটি পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং অনুমোদনের জন্য ওষুধ প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছে এই মাসের গোড়ার দিকে।
ওষুধ প্রশাসন এখনো বীকন ফার্মার ওষুধের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। দেশিয় গবেষণা এবং উদ্ভাবনের প্রেমে হাবুডুব খাওয়া ‘দেশপ্রেমিকরা’ কেউ কিন্তু এটি নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি।
কেউ কিন্তু বলেননি এবাদুল করিম, বেক্সিমকো আওয়ামী লীগার বলে তাদের ওষুধের পরীক্ষা করছে না ওষুধ প্রশাসন। কেউ কিন্তু বলছেন না- বীকন ফার্মার মালিক আওয়ামী পরিবারের এটাই তাদের অপরাধ। ওষুধ প্রশাসনের দুর্নীতি প্রসঙ্গটা কিন্তু এই ক্ষেত্রে আলোচিত হয় না।
ওষুধই বলি, টেস্টিং কিটই বলি, মানুষের স্বাস্থ্য, জীবন মৃত্যুর সম্পর্ক যেখানে, সেই বিষয়গুলোতে আবেগ, রাজনীতি বাদ দিয়ে চিন্তার যোগ্যতা অর্জন করা দরকার। গবেষণার বিষয়ে গবেষকদের তর্ক করতে দেয়া দরকার, গবেষকরা বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনা করুক, রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি গবেষকদের কাজ না।
বীকনের করোনার ওষুধই বলি আর গণস্বাস্থ্যের করোনা টেস্টিং কিটই বলি- দুটোর কোনোটাই নতুন কিছু নয়। আন্তর্জাতিক মহলে দুটোর গ্রহণ বর্জন নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। সেদিকেও নজর রাখুন। ওষুধের মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলোর ব্যাপারে পর্যাপ্ত ধারণা না থাকলে, কেবল রাজনৈতিক বিশ্বাস থেকে ‘হাউকাউ; বাধিয়ে মানুষের কোনো উপকার করা যায় না।
লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, নতুন দেশ ডটকম।
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
প্রতিদিনবিডি২৪/একে আজাদ।
Leave a Reply