মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে টিভি ও সংবাদপত্রের ওপর থেকে, কিন্তু কেন? সময় এসেছে নতুন করে ভাবনার। শুধু অপরের ওপর দোষ চাপিয়ে লাভ নেই। সামাজিক গণমাধ্যমের দিকে তীর তাক করলে চলবে না। বিশ্ববাস্তবতার চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমাদেরই ভাবতে হবে নতুন করে।
সমাজে এক কঠিন সময়ে বাস করছি আমরা। সাধারণ মানুষের কাছে পেশাজীবীদের অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ। সে দিন এক পুরনো বন্ধু দেখা করতে এলেন অফিসে।
গল্প শোনালেন পেশাজীবীদের বর্তমান অবস্থান নিয়ে। বন্ধুর গল্পটি নগরজীবনে সমস্যাপীড়িত এক ব্যক্তিকে নিয়ে। রাজধানীতে বাস করা এই ব্যক্তির ঘুম ভাঙল পেটের ব্যথা নিয়ে। বুঝলেন, খাবারে ভেজাল অথবা ওয়াসার সুপেয় পানি পানের কারণেই হয়েছে। গেলেন সরকারি হাসপাতালে।
দেখলেন, ডাক্তার নেই। খোঁজ নিলেন কোথায় ডাক্তার সাহেবরা। শুনলেন, দুই ডাক্তার সাহেব এসেছিলেন হাসপাতালে। কিন্তু একজন গেছেন ড্যাবের আন্দোলন কর্মসূচিতে। আরেকজন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের আনন্দ র্যালিতে।
মনটা খারাপ হলো ভদ্রলোকের। ভাবলেন, ডাক্তার সাহেবরা আসুক। ফাঁকে অন্য কাজ সেরে আসা যাক। অসুস্থ শরীর নিয়েই গেলেন এক সরকারি অফিসে। উদ্দেশ্য, বাড়িতে গভীর নলকূপ বসাবেন। শুনলেন, প্রকৌশলী সাহেব গেছেন এক বড় নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। রাজনীতি নিয়ে এই প্রকৌশলীর ভীষণ আগ্রহ। তাছাড়া সবাইকে ম্যানেজ করেই তো চলতে হয়। সকালের দুটি ঘটনাই মিডিয়াতে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নিলেন ভদ্রলোক। এবার গেলেন পত্রিকা আর টিভি অফিসে। এখানেও একই চিত্র। দুই সাংবাদিক লড়ছেন, বিএনপি-আওয়ামী লীগ নিয়ে। একজন কট্টর বিএনপি, আরেকজন কট্টর আওয়ামী লীগ। দুজনের লড়াইয়ে জড়াননি এমন একজনের কাছে ঘটনা জানতে চাইলে বললেন, তারা দুজন একটু পর দুই দলের কর্মসূচিতে যোগ দেবেন। যাওয়ার আগে নিজেরা একটু ফ্রেন্ডলি বিতর্কে অংশ নিচ্ছেন। সিরিয়াস কিছু না। ভদ্রলোক এবার বললেন, আপনি মানুষ হিসেবে ভালো মনে হচ্ছে। কোনো কিছুতেই নেই মনে হচ্ছে। জবাবে ওই ভদ্রলোক বললেন, আমি পুরনো বাম। দুই দলের কোন দল জেতে অপেক্ষায় আছি। যে জিতে তার পক্ষ নেব। ভদ্রলোক আর কথা বাড়ালেন না। বের হয়ে এলেন মিডিয়া অফিস থেকে। ভাবলেন, নিউজের আর দরকার নেই। কার হাতে নিউজ দেব, কোন পক্ষে লিখে দেবে তার ঠিক নেই। তার চেয়ে বাড়িতে চলে যাই। মিডিয়া অফিস থেকে বের হতেই এক আত্মীয় ফোন করে জানাল, ডাক্তার সাহেব মিছিল থেকে ফিরেছেন। এখন যান। এর মাঝে লেগেছে ক্ষুধা। ভাবলেন, কিছু খাবেন। কিন্তু ভেজালের কথা মনে হতেই সাহস পেলেন না আর বাইরে খেতে। হাসপাতালে আবার গেলেন। ডাক্তার সাহেব ভীষণ গম্ভীর। কথা শুনলেন না। কতগুলো টেস্ট লিখে দিলেন। কিন্তু কোনো টেস্টই সরকারি হাসপাতালে না। এবার ভদ্রলোক জানতে চান, টেস্টগুলো কি বাইরে করাব? জবাবে ডাক্তার মুখ খুললেন, বললেন অবশ্যই বাইরে করাবেন। কারণ এখানে বছর বছর যত যন্ত্রপাতি নতুন কেনা হয়েছে সব নষ্ট। এগুলো কাজ করে না। চাইনিজ মাল। দেওয়ার কথা জার্মানির। দিয়েছে চাইনিজ। কী আর করা। আপনার সব টেস্ট বাইরে থেকে করুন। নতুন যন্ত্রপাতি নষ্ট হয় কী করে? এ প্রশ্ন করতে গিয়ে করা হলো না। এর মাঝে ফোন আসে অফিসের ম্যানেজারের। তার কাছেও ভালো খবর নেই। অফিস থেকে জানাল, স্যার ব্যাংকে টাকা নেই। এলসি খোলা যাবে না। তিনি ক্ষুব্ধ হলেন, দুঃখ দুঃখ ভাব নিয়ে বললেন আমার টাকা আমি তুলব। টাকা নেই বললেই হলো? জবাব এলো, ব্যাংক ম্যানেজার বলেছেন, কিছুদিন ধৈর্য ধরতে। ব্যাংক খালি। টাকা আসতে সময় লাগবে। অনেকে এলসি খুলতে পারছে না। লিজিং কোম্পানির অবস্থা আরও খারাপ। আমানতের টাকা চাইলে তারা কিস্তিতে দেয়। মন খারাপ করে ভদ্রলোক বাড়ি ফিরে গেলেন।
পুরোটাই গল্প। কিন্তু এই গল্পই এখন আমাদের সমাজের বাস্তব চিত্র। চাইলে আর এই গল্প আরেকটু টানা যেত। চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ বিমানের টিকিট কেনায় সমস্যা, বিমানবন্দরে গিয়ে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনের হয়রানি, সার্বিক অবস্থা নিয়ে টকশোতে কথা বলার অনুরোধ জানাতে গিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দলবাজির কান্ড কীর্তি দেখা। আমাদের চারপাশ নিয়ে এই ধরনের গল্পের এখন আর শেষ নেই। বাস্তবতা হলো, আমরা সবাই পেশাদারিত্ব হারিয়েছি। সাধারণ মানুষ ব্যথিত। সব কিছুতেই অতি রাজনীতি ঢুকে পড়েছে। রাজনীতি খারাপ কিছু না। সর্বনাশটা ডেকে আনে অতি রাজনীতি। নবাগত, বহিরাগত, হাইব্রিড তৈরি করে। সবাই এখন ক্ষমতাসীন দলের ত্যাগী কর্মী। পেশাজীবীরা এখন আর নিজেদের আত্মমর্যাদা নিয়ে থাকতে নারাজ। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বার্থে স্বকীয়তা বাদ দিয়ে সবাই রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত। চারদিকে তোয়াজ ও দাসত্ব নীরবে সর্বনাশ করে ছাড়ছে। সত্যিকারের রাজনীতি হারিয়ে যাচ্ছে। অথচ রাজনীতি খারাপ কিছু নয়। রাজনীতি ছাড়া টুইন টাওয়ার নির্মাণ হয়নি। আবার রাজনীতি ছাড়া টুইন টাওয়ার ধ্বংসও হয়নি। সব কিছুর আড়ালে একটা রাজনীতি লুকিয়ে থাকে। এই রাজনীতির ইতিবাচক ধারা আছে। আবার নেতিবাচক ভয়াবহতাও রয়েছে। সমাজ ও দেশকে এগিয়ে নিতে ইতিবাচক ধারাটুকুই দরকার। নেতিবাচক দিকটা বেশি চলে এলেই সামাজিক ন্যায়বিচার বিঘ্ন হয়। সমাজে অস্থিরতা তৈরি হয়। রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে যায়। মানুষ স্বাভাবিকতা হারায়। অস্বাভাবিকতার ভয়াবহতায় সব কিছুই তখন মনে হয়- ঠিকই তো আছে। এমনই হওয়ার কথা ছিল। নীতি নৈতিকতার অবক্ষয় নিয়ে প্রশ্ন উঠে আসে না। বরং ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে কেউ কথা বললে অস্বাভাবিক মনে হয়। এখন প্রতিষ্ঠানগুলোর ধ্বংস নিয়ে আমাদের চিৎকার কারও গায়ে লাগছে না। সাদা চোখে তাকালেই চোখে ভাসে, আমাদের নির্বাচন কমিশন শেষ। পুলিশ, সিভিল প্রশাসন, মিডিয়া, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশ্নবিদ্ধ। আইনের শাসন নীরবে কাঁদে। নির্বাচন কমিশন আছে খুশিতে, ঠেলায়, ঘোরেতে। অথচ নির্বাচন কমিশন শেষ হলে কার্যকর সংসদ আসে না। আর কার্যকর সংসদ না এলে রাষ্ট্রে আইনের শাসনের বিকাশ হয় না। মানুষ কথা বলার অধিকার হারায়। অন্যদিকে ইসির ব্যর্থতায় স্থানীয় সরকার শেষ হয়। আসলে রাষ্ট্রের বিভিন্ন কাঠামো একটির সঙ্গে আরেকটি গভীরভাবে সম্পৃক্ত।
জীবনের এই প্রান্তে দাঁড়িয়ে চারপাশ দেখে বিস্মিত হই। হতাশ হই না। মনে হয়, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে একদিন। কিন্তু ভিতরে ভিতরে আশার আলোগুলো হুট করে যখন তখন নিভে যায়। ভিতরের রক্তক্ষরণ ছাড়া তখন আর কিছুই করার থাকে না। মানুষের চিন্তা চেতনাও বদল দেখে কষ্ট পাই। আমাদের চারপাশটা কেমন যেন বদলে গেছে। রাজনৈতিক সংস্কৃতির এই চিত্র বড্ড অচেনা। রাজনীতির স্বাভাবিক ছন্দ না থাকলেই সমাজে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। হিংসা প্রতিহিংসার জন্ম নেয়। সমাজে সুবিধাবাদীদের অনাচার বেড়ে যায়। অথচ এই বাস্তবতা আমরা দেখতে চাইনি। একটি সহনশীল সমাজেরই প্রত্যাশা ছিল। অস্বাভাবিকতাই সর্বনাশ করছে সমাজ ও রাজনীতির। রাজনীতিকে মোকাবিলা করা দরকার রাজনৈতিকভাবে। শক্তি দিয়ে মোকাবিলা করতে গেলেই সমস্যা। ২০০১ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর বিএনপি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছিল। আইনশৃঙ্খলা ঠিক করতে সেনা ডাকতে হয়েছিল তখনকার প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে। বিরোধী দলের ওপর অত্যাচার-অবিচারের খেসারত এই দলটিকে দিতে হচ্ছে এখন। জঙ্গিবাদের বিকাশ, চট্টগ্রামে অস্ত্র উদ্ধার, শাহ এ এম এস কিবরিয়া, আহসান উল্লাহ মাস্টারসহ রাজনৈতিক হত্যাকান্ড, ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর গ্রেনেড হামলা, একুশ আগস্টের নিষ্ঠুর হত্যালীলা, শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টার খেসারত বিএনপি দিচ্ছে, আর দেবে। বিএনপির ভুলের কারণেই ওয়ান-ইলেভেনের সৃষ্টি। সেই সব ভুল তারা না করলে আজকের রাজনৈতিক পরিবেশ হয়তো অন্যরকম হতো। ইতিহাসের কাঠগড়ায় বিএনপিকে দাঁড়াতে হতো না। ঘাতপ্রতিঘাত মোকাবিলা করেই বেগম জিয়া আজ রাজনীতি করছেন। জীবনের সবচেয়ে কঠিনতম সময় পার করছেন। ভুল রাজনীতির খেসারত মওলানা ভাসানীকেও দিতে হয়েছেিল। আওয়ামী লীগকে ৭৯ সালে ৩৯ জন এমপি নিয়ে টিকে থাকতে হয়েছে। কিন্তু ব্যক্তি ও সমাজজীবনে আমরা আর হিংসা প্রতিহিংসার রাজনীতি দেখতে চাই না। অন্যায় অসংগতির জায়গাগুলো চিহ্নিত করে এগিয়ে যেতে হবে ইতিবাচক ধারায়। বিকাশ ঘটাতে হবে সহনশীলতার। অন্যায় আর অসংগতি মানুষ আর দেখতে চায় না। অতীতের খারাপ থেকে শেখার কিছু নেই। বর্তমানকে ইতিবাচক চিন্তায় নিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানুষের ন্যায়বিচার আর কল্যাণকে সামনে রেখে দেশ স্বাধীন করেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক চিন্তা হলো দুর্নীতি, অন্যায় ও অসংগতির বিরুদ্ধে। সেই অবস্থানটুকু ধরে রাখতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অহংকার। বঙ্গবন্ধু আমাদের আদর্শ। এই আদর্শের জন্যই পাকিস্তানি সৈন্যদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে যারা ময়দানে শহীদ হয়েছেন তারাই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। যারা জীবিত আছেন তাদের অবদানও বিশাল। সত্যিকারের বীরযোদ্ধাদের অনেক পরিবার পরিজন এখনো আড়ালে। তারা মূল্যায়ন পাননি। আমার নিজের গ্রামেরই একজন রয়েছেন, নাম ছেরু মিয়া। আমার ভাইয়ের সঙ্গে যুদ্ধে গেছেন ’৭১ সালে। স্বাধীনতার পর সার্টিফিকেটের পেছনে দৌড়াননি। তবে জেনারেল ওসমানীর সার্টিফিকেট আছে। জীবন জীবিকার তাগিদে এই মুক্তিযোদ্ধা ট্রাক চালানো শুরু করেন।এখনো এই বয়সে কুয়েতে ট্রাক চালাচ্ছেন। একদিন আমাকে ফোন করে বলেন, টিভির পর্দায় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক তরুণ-তরুণীর কান্নাকাটি দেখি। আমি বা আমার সন্তানরা এই কাজটি বোঝে না। কীভাবে আমার অধিকার পাব বলতে পার? বললাম, আপনি কখনো আবেদন করেননি? জবাবে বললেন, আবেদন কেন করতে হবে? আপনার ভাইয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করেছি। এলাকাবাসী জানে। আমাদের কমান্ডার মালেক জানেন। আপনাদের বাড়ি ছিল আমাদের ঘাঁটি। সেই ইতিহাস এখন আর কাউকে বলে লাভ হয় না। দেশে এখন সবাই মুক্তিযোদ্ধা। সবাই আওয়ামী লীগ। আমরাই হারিয়ে যাচ্ছি। এমন ছেরু মিয়ারা হারিয়ে যাচ্ছেন সত্যিকারের যুদ্ধ করে। অন্যদিকে সরকারি চাকরির বড় পদের কর্তারা ভুয়া সার্টিফিকেট বানিয়ে ভাতা নিয়েছেন। সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। আবার এখন অনেকে ধরাও খেয়েছেন। কারও কারও সুযোগ-সুবিধা ফিরিয়েও দিতে হচ্ছে। বড় অদ্ভুত এক সমাজে বাস করছি আমরা। মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া কাগজ বানাতে ওদের অন্তর একটুও কাঁপেনি। সমাজের নৈতিক অবক্ষয়ে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেখে মানুষ ব্যথিত হয়। কষ্ট পায়। মুক্তিযোদ্ধাদের হৃদয় ভেঙে যায়।
এই অরাজকতা কেউই দেখতে চায়নি। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এই ব্যবসাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে। এগিয়ে যাবে। কিন্তু আমাদের সিস্টেমগুলো ফিরিয়ে আনতে হবে। সরকারের মেকানিজমের শেষ নেই। লোকবল, অর্থবলের অভাব নেই। তাহলে প্রাতিষ্ঠানিক সিস্টেমগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কেন?অনেক জবাব আছে আজ আর বলব না। সময় অনেক কিছু বলে দেবে। কিছু মানুষের অতি আওয়ামী লীগ হওয়ার চেষ্টাতেই সর্বনাশ বেশি হচ্ছে। সরকারি কর্মকর্তাদের দলীয় ক্যাডার হতে হবে কেন? জনগণের ট্যাক্সের টাকায় তাদের বেতন হয়। আওয়ামী লীগ করবেন রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা। কর্মকর্তারা আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে সরকারের নীতিগুলো সততা, নিষ্ঠা, দক্ষতার সঙ্গে নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন করবেন। আওয়ামী লীগের নামে সভা, সমাবেশে অংশগ্রহণ কর্মকর্তাদের কাজ নয়। এই কাজ দলীয় লোকজনকে করতে দিন। আপনারা সারা দিন অতি আওয়ামী লীগ না সেজে সরকারের গতি বাড়ান। কর্মকর্তারা সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করলে সরকারের উপকার হবে। কথায় চিড়া ভেজে না। চিড়া ভেজাতে পানি লাগে। নগরায়ণে পরিকল্পনা ফিরিয়ে আনতে হবে। এই শহরে একসঙ্গে গার্মেন্ট, ক্ষুদ্র, বড়, মাঝারি শিল্প, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক কার্যক্রম একসঙ্গে চলতে পারে না। আশির দশকে শহরে গার্মেন্ট ছিল, ঠিক আছে। কিন্তু এখন কেন? শিল্প, কলকারখানা অবশ্যই সরিয়ে নিতে হবে রাজধানী থেকে। নিচে মাংসের দোকান, ওপরে বিশ্ববিদ্যালয় কেন থাকবে? ক্যাম্পাস ছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি দেওয়া যাবে না। এত বছর পরও কার্যকর শিক্ষানীতি আমরা গড়ে তুলতে পারিনি। ইংলিশ মিডিয়াম, মাদ্রাসা, বাংলা মিডিয়ামের শিক্ষায় কোনো সমন্বয় নেই। এ কারণে বৈষম্য বাড়ছে। বিশ্ব বাস্তবতায় আমাদের কৃষ্টি সংস্কৃতির বর্তমান অবস্থান থেকে সার্বিক কাঠামো তৈরি করতে হবে। শুধু কথামালার সংস্কৃতিতে থাকলে চলবে না। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ দমনেও নিতে হবে বাস্তবমুখী দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। সাধারণ মানুষকে জাগ্রত করতে হবে। সত্যিকারের শিল্প সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে হবে। অস্বাভাবিকতা দীর্ঘমেয়াদে দেখতে চাই না। নিয়ম ও শৃঙ্খলায় সব কিছু ফিরিয়ে আনতে হবে। সময় লাগবে, লাগুক। কিন্তু লাগামহীনভাবে সবকিছু চলতে পারে না। অস্বাভাবিকতা দীর্ঘমেয়াদে চললে প্রকৃতি বিরূপ হয়। তখন বেরিয়ে আসে প্রকৃতির রুদ্ররূপ।
লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।
Leave a Reply