দলকে তৃণমূল পর্যন্ত ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি বিএনপি জামায়াতের অপ্রচারের জবাব দেবেন তারা।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দল গোছানো ও বিরোধীদের অপপ্রচারের জবাব দিতে মাঠে নামছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দেশের করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই আওয়ামী লীগের বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের সদস্যরা কাজ শুরু করবেন।
মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলনের মাধ্যমে দলকে তৃণমূল পর্যন্ত ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি বিএনপি জামায়াতের মিথ্যা ও অপ্রচারের জবাব দেবেন তারা।
মঙ্গলবার বিকালে গণভবনে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতি মণ্ডলীর সভায় এমন নির্দেশনা দিয়েছেন দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভায় দলের সাংগঠনিক বিভিন্ন বিষয় ও কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
এ সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা যেসব মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন এখনো বাকি আছে সেগুলো দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে ঢেলে সাজানোর নির্দেশনা দেন। ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে করোনার বিধিনিষেধ রয়েছে। এই সময়ের পরে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আট বিভাগের জন্য গঠিত আট সাংগঠনিক টিমের সদস্যরা তাদের কাজ শুরু করবেন।
সভায় সভাপতি মণ্ডলীর সদস্যদের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক বিভাগে যাওয়ার পরামর্শও দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সংগঠনকে তৃণমূল পর্যন্ত সম্মেলনের মাধ্যমে ঢেলে সাজাতে হবে। এর মধ্য দিয়ে দলের ভেতরে যেসব আগাছা আছে, তা উপড়ে ফেলতে হবে। নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো বিভেদ থাকলে তা দূর করে তাদের ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের মিথ্যা ও অপ্রচারের জবাব দিতে হবে। মানুষের কাছে গিয়ে সত্যটা তুলে ধরতে হবে।
সভায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ কয়েকটি উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের জয়ে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। এ সময় এসব নির্বাচনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনার এক পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনসহ অন্য সব নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়েও আলোচনা হয়। এ সময় বিদ্রোহী বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি আগের মতোই কঠোর অবস্থানের কথা জানান। তিনি বলেন, যারা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিদ্রোহী হয়ে নির্বাচন করেছে, তারা আগামীতে কোনো নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পাবে না। দলের গুরুত্বপূর্ণ পদেও তাদের রাখা হবে না। দলের তো একটা শৃঙ্খলা থাকতে হবে। দলের সিদ্ধান্ত সবাইকে মেনে চলতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বিকাল সাড়ে চারটায় বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাড়াও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফর উল্যাহ, নুরুল ইসলাম নাহিদ, ড. আবদুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, রমেশ চন্দ্র সেন, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র জানায়, বৈঠকে নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটির কাছে নাম জমা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। কীভাবে এই নাম পাঠানো যায় তা সবার কাছে জানতে চান প্রধানমন্ত্রী। পরে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়, সবার কাছ থেকে ১০টি করে নাম নেওয়ার। এ সময় তাদের ৩০ মিনিট সময় দেওয়া হয়। এই সময়ের মধ্যে সভাপতিমণ্ডলীর প্রত্যেক সদস্য কাগজে লিখে ১০টি করে নাম দলীয় সভাপতির কাছে জমা দেন। প্রস্তাবকৃত নামের মধ্য থেকে কমন নাম পাঠানো হবে বলে জানানো হয়। তবে উপস্থিত নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন-নাম পাঠানোর বিষয়ে আপনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেটাই চূড়ান্ত।
সূত্র জানায়, পৃথক পৃথক নাম দেওয়া হলেও ৪০-৪৫ জনের তালিকা দলীয় সভাপতির হাতে তুলে দেওয়া হয়। এই নাম থেকে ১০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা পাঠানো হবে সার্চ কমিটিতে। ইসিতে বসাতে যেসব নাম পাওয়া গেছে এসবগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগের পছন্দের তালিকায় রয়েছেন-সাবেক প্রধান বিচারপতি, বিচারপতি, সাবেক সচিব, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি, পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যানসহ বিশিষ্টজনরা।
সভায় র্যাপিট অ্যাকশন বাটিলিয়ন-র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়। এ সময় জঙ্গি-সন্ত্রাস দমনে র্যাবের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরে আলোচনা হয়। সভায় উপস্থিত সদস্যরা আমেরিকার বিচারবহির্ভূত হত্যার চিত্র তুলে ধরে বলেন, তারা যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন এটার যৌক্তিকতা নেই। বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা বলেন, র্যাবের এই বিষয়টি নিয়ে আমরা দেশে ও দেশের বাইরে যখন কথা বলব তখন সবাইকে বোঝাব। র্যাবের দায়িত্বশীল ভূমিকার জন্য দেশে জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস দমন হয়েছে। এটা করলে (নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলে) তো আবার এগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে।
সভায় সভাপতিমণ্ডলীতে জায়গা পাওয়া নতুন তিন সদস্য-এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য রাখেন। এছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন ড. আব্দুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান।
দেশ বদলে দিয়েছি জনগণ আমাদেরই ভোট দেবে : এর আগে সভার সূচনা বক্তব্যে আগামী নির্বাচনেও দেশের জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে আশা করি জনগণ আমাদের ভোট দেবে। কারণ একটা দেশকে আমরা বদলে দিয়েছি। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, জনগণের ওপর আমাদের আস্থা আছে। করোনা মহামারি মোকাবিলায় তার সরকারের গৃহীত নানা পদক্ষেপের কথা বৈঠকে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস সংকটে বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে আমরা স্থিতিশীল রেখেছি। বর্তমানে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ এবং মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৯১ মার্কিন ডলার।
আওয়ামী লীগ সভাপতি তার বক্তৃতায় আরও বলেন, আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। আজকে আমরা ক্ষমতায় রয়েছি বলেই মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক, আমার বাড়ি আমার খামার ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে সব সুযোগ-সুবিধা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছি।
দেশের কেউ গৃহহীন থাকবে না; শতভাগ মানুষ বিদ্যুতের আওতায় এসেছে।
প্রতিদিনবিডি২৪/একে আজাদ;
Leave a Reply