শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের চার কর্মকর্তার প্রশ্নবানে ‘অসহায়ত্ব প্রকাশ করে চলছেন মনিপুর স্কুল এন্ড কলেজের ‘অধ্যক্ষ’ ফরহাদ হোসেন সহ অন্যান্যরা। কোটি কোটি টাকা লুটপাট ও অধ্যক্ষ পদে অবৈধভাবে নিযুক্ত এই দুর্নীতিবাজ শিক্ষকের দীর্ঘ দিনের অপকর্মের সঙ্গীরা সটকে পড়তে শুরু করেছেন। গত চারদিন ধরে তদন্ত কর্মকর্তারা যত কাগজ পত্রই দেখতে চাচ্ছেন, ততই একটাই উত্তর আউড়ে যাচ্ছেন তিনি- ‘এটা মন্ত্রী মহোদয় জানেন’।
এই মন্ত্রী মহোদয় হলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির দীর্ঘদিনের সভাপতি ও প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। তবে, গতকাল তিনি তদন্ত কর্মকর্তাদের সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘দুর্নীতি যেই করুক চিহ্নিত করতে হবে’। এই কথা শোনার পর ফরহাদসহ অনেকের মধ্যে অসহায়ত্ব শুরু হয়েছে। একাধিক সূত্রমতে অনুসন্ধানে জানা গেছে, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, শিক্ষকদের মতামত ছাড়াই এমপিও সারেন্ডারের উদ্যোগ ও আবেদন, কেনাকাটায় কোটি কোটি টাকা লুটপাট ও ট্রাস্ট গঠনসহ নানা অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন রাজধানীর মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক ফরহাদ হোসেন এন্ড গয়রহ। তিনি নিজেকে চুক্তিভিত্তিক অধ্যক্ষ দাবি করে আসছেন, যা অবৈধ। এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ, এমপিও সারেন্ডারের কাগজে জোরপূর্বক সই নেয়া, মামলা-মোকদ্দমায় জড়ানো, নানাখাতে কোটি কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। সার্বিক বিষয়ে তদন্ত করছে ডিআইএ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তার তথ্য অনুযায়ী, ফরহাদ হোসেনের নিয়োগ যে অবৈধ তা শিক্ষা অধিদপ্তরের তদন্তেই প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানেরই অনিয়ম তদন্তে গঠিত আরো একটি কমিটি এ বিষয়ে তদন্তই শুরু করেনি। গত ১৮ মে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক মো. মনোয়ার হোসেনকে তদন্তের দায়িত্ব দেয় ঢাকা শিক্ষাবোর্ড। ওই দিনই ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক আবু তালেব মো. মোয়াজ্জেম হোসেনের সই করা এক অফিস আদেশে এই তথ্য জানা গেছে।
তবে মনোয়ার হোসেন জানান তিনি চিঠি পাননি, চিঠি না পেলে কাজ শুরু করতে পারবেন না। যদিও ঢাকা বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলেছে, তার কাছে ডাকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
জানা যায় এর আগে গঠিত কমিটির এক সদস্য মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ফরহাদ হোসেনের পক্ষে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তবে, আরেক সদস্য সঠিক প্রতিবেদন দেয়ার পক্ষে ছিলেন। অভিযোগ পেয়ে তদন্ত কমিটি পুনর্গঠন করে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড।
এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পৃথক অনুসন্ধান ও তদন্তে ফরহাদের অবৈধ কর্মকাণ্ড ও দুর্নীতির প্রমাণ মেলে।
ফরহাদ হোসেন নিজেকে অধ্যক্ষ দাবি করে ইতোমধ্যে লাখ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন বলে প্রমাণ পেয়েছে দুদক। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে অধ্যক্ষ পদ কুক্ষীগত করে বেতন ভাতা নিয়ে আসছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত নির্দেশনা অনুযায়ী ফরহাদ হোসেন অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ লাভের যোগ্য ছিলেন না।
প্রতিদিনবিডি২৪/সাইকা;
Leave a Reply