অনলাইন ডেস্ক ;
এবারের বাজেটে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দিয়েছে সরকার। শর্তসাপেক্ষে ১০ শতাংশ বাড়তি শুল্ক দিয়ে শেয়ার বাজার, স্টক ডিভিডেন্ড, মিউচুয়াল ফান্ড, বন্ড, ডিভেঞ্চার খাতে কালো টাকা বিনিয়োগ করার সুযোগ থাকছে। সেই সঙ্গে কালো টাকা, অপ্রদর্শিত অর্থে কেনা ফ্ল্যাট ও জমি বৈধ করার সুযোগও দেওয়া হচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ১১ জুন জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের যে বাজেট পেশ করেছেন, সেখানে এ বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘দেশের প্রচলিত আইনে যা–ই থাকুক না কেন, ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত জমি, বিল্ডিং, ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্টের প্রতি বর্গমিটারের ওপর নির্দিষ্ট হারে এবং নগদ অর্থ, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, বন্ড বা যেকোনো সিকিউরিটিজের ওপর ১০ শতাংশ কর প্রদান করে আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করলে আয়কর কর্তৃপক্ষসহ অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, কিছু ক্ষেত্রে করদাতার রিটার্ন দাখিলে অজ্ঞতার কারণে তাদের কিছু অর্জিত সম্পদ প্রদর্শনে ত্রুটি বিচ্যুতি থাকতে পারে। এ অবস্থায় আয়কর রিটার্নে তাদের ত্রুটি সংশোধনের সুযোগ দেওয়া উচিত।
সূত্র জানিয়েছে, আয়কর রিটার্নের বাইরে থাকা অপ্রদর্শিত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি, নগদ টাকা, ব্যাংক আমানত, সঞ্চয়পত্র পুনরায় রিটার্ন দাখিলের শর্তে ১০ শতাংশ হারে বাড়তি শুল্ক দিয়ে বৈধ করার সুযোগও দেওয়া হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, আয়কর অধ্যাদেশের ১৯ ডিডি ধারা অনুযায়ী, ১০ শতাংশ কর দিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে বিনিয়োগ করা যায়। আন্ডার ইনভয়েসিং-ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অর্থপাচার রোধে আয়কর অধ্যাদেশে নতুন ধারা (১৬এইচ) যুক্ত করা হয়েছে। এ ধারা অনুযায়ী, আয়কর রিটার্ন পর্যালোচনায় ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আন্ডার ইনভয়েসিং বা ওভার ইনভয়েসিং ধরা পড়লে গোপনকৃত বা পাচারকৃত অর্থের ৫০ ভাগ জরিমানা আদায় করা হবে।
আয়কর অধ্যাদেশের ১৯এ ধারা অনুযায়ী, অপ্রদর্শিত অর্থে কেনা ফ্ল্যাট ও জমি উভয়ের ক্ষেত্রে বর্গমিটারপ্রতি নির্দিষ্ট হারে শুল্ক দিয়ে বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। তবে নির্ধারিত শুল্ক হার এলাকা ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হবে। তবে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে মিথ্যা ঘোষণা পরবর্তী সময়ে প্রমাণিত হলে বাড়তি কর পরিশোধ করার বিধান রাখা হচ্ছে এবারের বাজেটে।
সূত্র জানায়, আয়কর অধ্যাদেশের একই ধারা অনুযায়ী, আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) তালিকাভুক্ত স্টক, শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড এবং সরকারি বন্ড ও ডিভেঞ্চারে অপ্রদর্শিত অর্থ তিন বছরের জন্য বিনিয়োগ করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। ৩ বছর আগে বিনিয়োগের টাকা উত্তোলন করলে করদাতাকে সাধারণ হারে কর পরিশোধ করতে হবে।
এক্ষেত্রে গুলশান মডেল টাউন, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল ও দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকায় ২০০ বর্গমিটারের কম আয়তনের ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গমিটারের জন্য ৪ হাজার টাকা, ফ্ল্যাটের আয়তন এর বেশি হলে প্রতি বর্গমিটারের জন্য ৬ হাজার টাকা, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, ডিওএইচএস, মহাখালী, লালমাটিয়া হাউজিং সোসাইটি, উত্তরা মডেল টাউন, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, সিদ্ধেশ্বরী, কাওরান বাজার, বনশ্রী, বিজয়নগর, ওয়ারী, সেগুনবাগিচা, নিকুঞ্জ, চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ, খুলশী, আগ্রাবাদ ও নাসিরাবাদ এলাকায় ২০০ বর্গমিটারের কম আয়তনের ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গমিটারের জন্য ৩ হাজার টাকা এবং এর চেয়ে বেশি আয়তনের ফ্ল্যাটের জন্য সাড়ে ৩ হাজার টাকা, ঢাকা সিটি করপোরেশনের অন্য সব এলাকা এবং অন্য সিটি করপোরেশনে ১২০ বর্গমিটার ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গমিটারের জন্য ৭০০ টাকা, ১২০ থেকে ২০০ বর্গমিটারের ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে ৮৫০ টাকা এবং ২০০ বর্গমিটারের চেয়ে বেশি আয়তনের ফ্ল্যাটের জন্য ১৩০০ টাকা, জেলা শহরের পৌরসভা এলাকায় একই আয়তনবিশিষ্ট ফ্ল্যাটের জন্য যথাক্রমে ৩০০, ৪৫০ এবং ৬০০ টাকা এবং দেশের অন্য সব এলাকার ক্ষেত্রে একই আয়তনের ফ্ল্যাটের জন্য ২০০, ৩০০ ও ৫০০ টাকা কর ধার্য করা হচ্ছে।
অন্যদিকে রাজধানীর গুলশান, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল ও দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকায় প্রতি বর্গমিটার জমির জন্য ২০ হাজার টাকা কর দিতে হবে। ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, ডিওএইচএস, মহাখালী, লালমাটিয়া হাউজিং সোসাইটি, উত্তরা মডেল টাউন, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, সিদ্ধেশ্বরী, কাওরান বাজার, বিজয়নগর, ওয়ারী, সেগুনবাগিচা, নিকুঞ্জ, চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ, খুলশী, আগ্রাবাদ ও নাসিরাবাদ এলাকার জন্য ১৫ হাজার ৫০০ টাকা।
অন্য সিটি করপোরেশন এলাকা জমির ক্ষেত্রে প্রতি বর্গমিটার ৫ হাজার টাকা, জেলা শহরের পৌরসভায় এলাকায় এক হাজার ৫০০ টাকা এবং অন্য এলাকার জন্য ৫০০ টাকা হারে বাড়তি কর দিতে হবে।
প্রসঙ্গত, প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬৮ হাজার ১৩ কোটি টাকা।
এর মধ্যে রাজস্ব প্রাপ্তি থেকে আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর নিয়ন্ত্রিত কর ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। অনুদান ব্যতীত ঘাটতি ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি জিডিপির ৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এই ঘাটতি ৫ শতাংশ।
প্রতিদিনবিডি২৪/সাইকা
Leave a Reply