মনিপুর স্কুল ও কলেজে করোনা কালীন ক্ষতিগ্রস্ত অভিভাবকদের ও স্কুল কর্তৃপক্ষের আলোচনা সভায় আমার বক্তব্যটি হুবহু তুলে ধরলাম – মোঃ আবুল কালাম আজাদ।
মঞ্চে ও অডিয়েন্সে উপস্থিত সকলকে
আচ্ছালামু আলাইকুম।
আজকের সভার সম্মানীত প্রধান অতিথী গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় শিল্প প্রতিমন্ত্রী, মিরপুরের গন মানুষের অভিভাবক, মনিপুর স্কুল এণ্ড কলেজের অভিভাবক, আমাদের অভিভাবক জননেতা আলহাজ্ব কামাল আহমেদ মজুমদার।প্রতিষ্ঠানের সম্মানিত অধ্যক্ষ,সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ, আমন্ত্রিত অতিথি বৃন্দ, স্থানীয় ৭নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আলহাজ্ব মোবাশ্বের চৌধুরী,বর্তমান কাউন্সিলর আলহাজ্ব তফাজ্জল হোসেন টেনু, রূপনগর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ ও তার টিম, মিডিয়া ও সাংবাদিক ভাইয়েরা, স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও উপস্থিত অভিভাবক ভাই ও বোনেরা।
আমি আসলে শুনি বেশী বলি কম।আমি ১৯৮৯সালে RU থেকে এমএ শেষ করার পর ১৭ই নভেম্বর/১৯৮৯ রূপনগরে স্থায়ী ভাবে বসবাস করি।আমি মনিপুর স্কুল এণ্ড কলেজের সাথে ২০বছর যাবত অভিভাবক হিসেবে জড়িত আছি।আমার বড় মেয়ে ব্রাঞ্চ-১ এর ফাউণ্ডার ছাত্রী,এমএসসি ফাইনাল ইয়ার, ২য় মেয়ে ইংরেজীতে অনার্স অধ্যয়নরত। ৩য়টি ৬ষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্রী।
এ স্কুল ভবনের প্রথম কাজ ধরার সময় পশ্চিমপার্শ্বে ওয়ালের দক্ষিন পশ্চিম কর্নারের খুটি ১০নং রোডে। খুটিটা পোতার সৌভাগ্যবান ব্যাক্তি আমি ছিলাম।স্বাক্ষী গাজী আলামগীর ও নৈশ প্রহরী মজিবর।
মাননীয় প্রধান অতিথী প্রথমেই আমরা আপনার কাছে ঋনি স্বীকার করতে চাই।কারন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দ্বায়িত্বে থেকেও ২৪তারিখ আপনি আমাদের সাথে ২.৩০মি মূল্যবান সময় ব্যায় করেছেন, আমাদের কথা শুনেছেন, আমাদের শুনিয়েছেন, শান্তনা দিয়েছেন, অভয় দিয়েছেন এবং আজ ১১টার সময় এই ক্যাম্পাসে এসে আপনার প্রিয় অভিভাবকদের কথা শুনছেন, সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন এজন্য আমরা কৃতজ্ঞ।
মাননীয় মন্ত্রী ২৪তারিখে আপনার মনের ভিতরে ১টি ক্ষোভ, কষ্টের বহিঃপ্রকাশ দেখেছি অভিভাবকরা বেতন মওকুপের আন্দোলন করায়।বিষয়টি পরিস্কার করা উচিত বলে আমি মনে করি।
আসলে ঘটনাটি অন্যরকম, হাতের ৫আঙ্গুল যেমন সমান নয়,তেমনি সকলের উপস্থাপনও সমান নয়।
এজন্য একটি ছোট স্ক্রিপ্ট বলতে চাই-
আজকে সনাতন ধর্মালম্বীদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান দুর্গা পুজা।এই দুর্গা দেবী আর তার পায়ের কাছে আক্রান্ত মহীশাশুরের একটি শর্ট স্ক্রিপ্ট আমি ভারতে মঞ্চায়ন দেখেছিলাম।অশুর এত পরিমানে দেবতাভক্ত ছিলো যে, দেবতারা সবাই মিলে একদিন তাকে পুরস্কার স্বরুপ অমরত্ব বর দান করলেন।অশুর মর্ত্তলোকে চলে আসলো, সে মর্ত্তলোকে অত্যাচার অনাচার করতে লাগলো।দেবতারা আবার ক্রুব্ধ হয়ে অশুরকে দমন করতে চাইলো।দেবতারা আবার স্বর্গে একত্রিত হলো।অবশেষে সিদ্ধান্ত হলো ১০গুন শক্তি বৃদ্ধি করে নারী শক্তি ছাড়া অশুরকে বধ করা সম্ভব নয়।
অতঃপর ১০গুন শক্তি দিয়ে নারী শক্তি মহামায়া দুর্গাকে মর্ত্তলোকে পাঠানো হলো অশুরকে বধ করার জন্য।
ময়দানে যুদ্ধ শুরু হলো,অশুর দশ শক্তির ধারক মহামায়া দেবী দূর্গার কাছে পরাজিত হলো।
অতঃপর অশুর বললো হে দেবী, আমাকে ক্ষমা করে দাও, আমি তোমার সাথে যুদ্ধ করতে আসিনি, তোমার কাছে যাওয়ার জন্য আমি স্বর্গীয় দেবতাদের সহযোগিতা পাইনি, আমি অমরত্ব চাইনা,তোমার পায়ের কাছে থেকে মর্ত্তলোকে পূজনীয় হতে চেয়েছিলাম, তাই এতো আয়োজন।
মাননীয় মন্ত্রী সকলকে ক্ষমা করে দেয়ার অনুরোধ করছি।
২৪তারিখে আপনি কর্তৃপক্ষকে ধমকিয়ে ছিলেন বিভিন্ন কৃতিম অব্যবস্থাপনা সৃষ্টি হওয়ার জন্য।আশা করি অনেক সমস্যার সমাধান হবে।এজন্য মাঝে মাঝে স্বয়ং আপনার নিজেই হস্তক্ষেপ করা দরকার।
প্রতি ব্রাঞ্চে আপনি কিছু নিজস্ব গোয়েন্দা রাখার সুপারিশ করি, তারা শিক্ষক কর্মচারী, অভিভাবক সকলের অনিয়ম তথ্য আপনাকে সরাসরি দিবে।তাতে কোনো পক্ষই অনিয়ম করার সাহস থাকবেনা।
আপনার আমাদের প্রতিষ্ঠানে কয়েকজন ক্ষমতাধর শিক্ষক রয়েছেন তারা অভিভাবকদের খুবই তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে।অভিভাবকরা কোনো সমস্যা বা আবেদন নিয়ে গেলে তাদেরকে বসতেও বলে না, সামনে চেয়ার থাকা সত্বেও দাড় করিয়ে কথা শুনতে চায়।শুনার পরে বলে ক্লাস টিচারের কাছে যান,তার পর ২/৩/৪/৫ তলা উঠা নামা,সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে খুঁজে পাওয়া আরো কঠিন। এটি ১০০% সত্য অভিযোগ।এটি চরম অপদস্ততা।অনেক অভিভাবক উচ্চ শিক্ষিত। মুর্খই হোক!! অভিভাবকতো!!!
শিক্ষক যদি ছাত্রের ২য় পিতা হয় তাহলে জন্মদাতা পিতাতো আপনার পরম বন্ধু।তাকে কেনো অশ্রদ্ধা??
আর মন্ত্রী মহোদয়ের সন্তুষ্টি নেয়ার জন্য যদি কোনো শিক্ষক অভিভাবকদের সাথে বৈরী আচরন করেন তাহলে আপনিতো শিক্ষক বা অধ্যক্ষ থাকলেন না।
মনিবের সন্তুষ্টি অর্জন করে সুবিধা ভোগ করা নিরাপত্তা প্রহরীদের চরিত্র।
এতে স্কুলের সম্মান বাড়েনা বরং কমে।আপনারা প্রকৃতপক্ষে যার সন্তুষ্টির জন্য এগুলি করেন তাতে তার ক্ষতিই করেন।
অভিভাবকদের সম্পর্কে মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে যে নেগেটিভ তথ্য দেয়া হয়েছে এজন্য সুবিধাভোগীরা দায়ী।আমার জানা মতে কোনো অভিভাবক উম্মুক্ত স্থানে কোনো শিক্ষককে গালাগাল করেছে বলে আমি জানিনা।
বরং অনেক দায়িত্ব প্রাপ্ত শিক্ষকরা সব উপরের নির্দেশ উপরের নির্দেশ এই বলে অভিভাবকদের সাথে কর্কশ ব্যবহার করে থাকেন।এটা আমার ২০বছরের অবিজ্ঞতা।
আপনারা এই প্রতিষ্ঠানে যারা চাকরী করেন তাদের অনেকেরই মিরপুরে গাড়ী বাড়ী ফ্লাট আছে।আমরা শুধু দিয়েই গেলাম, শুধু সন্তানটা মানুষ করে নেয়ার জন্য।এটুকু অন্তত আমাদের দিন।
উপরের নির্দেশ উপরের নির্দেশ এই বলে আমাদের হয়রানি করিয়েন না।মন্ত্রী মহোদয় সেদিন জানতে চেয়েছিলেন সেই উপরওয়ালাটা কে??
কেহ জবাব দিতে পারে নাই।
সবার সাথে ভালো ব্যবহার করুন, ৪০হাজার ছাত্রের ৮০হাজার অভিভাবক যদি একবার বলে স্কুলের শিক্ষকরা ভালো তাহলে মিডিয়া ফেল করবে।
প্রতিষ্ঠানে ২ধরনের শিক্ষক আছেন।
১)শাসক শিক্ষক
২)শাসিত শিক্ষক
শাসক শিক্ষকরা ক্ষমতাধর, তারা সারাদিন থাকে ঝাকে ঝাকে ব্যাচ কোচিং নিয়ে ব্যাস্ত থাকে।আমাদের বাচ্চা মানুষ করার জন্য তাদের মাথা ব্যাথা নেই, তাদের বাড়ী গাড়ী আছে।তাদের শুধু টাকা টাকা টাকা চাই।এর কারনে এলাকা ৪০টি কোচিং সেন্টার গড়ে উঠেছে।অভিভাবকরা সারাদিন বাচ্চা নিয়ে কোচিং কোচিং ছুটে বেড়ায়।মায়েদের খাওয়া নেই, বিশ্রাম নেই। অনেক সময় মায়েদের ওয়াস রুমে যেতে অথচ তাদের জন্য ওয়াস রুমটা পর্যন্ত নেই আমাদের প্রতিষ্ঠানে।গেটের কাছে একটা ওয়াস রুম আছে, নারী পুরুষ কমন।মান সম্মত নয়।লজ্জাজনক।
আর শাসিত শিক্ষক যারা তারা অসহায়, ব্যাচ কোচিং কিছুই নাই, স্কুলের বেতন দিয়েই চলে এদের প্রতি আপনি অগ্রাধিকার দিন মাননীয় মন্ত্রী।বাচ্চা যতটুকু শিখে এদের কাছেই শিখে।বাচ্চা ভালো রেজাল্ট করে বলেই স্কুলের সুনাম হয়।এই সুনামের ৭০% সুনাম শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠানের আন্তরিকতায় হওয়া উচিত ৩০%অভিভাবকের।কিন্তু দুঃখের বিষয় এখানে মায়েদের শ্রম ৯০% শিক্ষকদের আন্ততরিকতা ১০%। এই প্রতিষ্ঠানে এক সময় অভিভাবকরা বাচ্চা ভর্তি করানোর জন্য নিজেও ইন্টারভিই দিতে হত।সিট (আসন সংখ্যা) না থাকার কারনে শত শত ফিরে যেত।আর এখন গড়ে ভর্তি করেও সিটখালি থাকে।দুঃখ জনক।
মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় ২৪তারিখ আপনি বলেছিলেন আমরা বাচ্চাদের মিনারেল ওয়াটার কিনে খাওয়াই।তাই ১০০টাকা করে নেই।আমার আবেদন আপনি ৭১বছর বয়সী আমি ৫২। আপনি আমাদের পিতার মতো।আপনার নাত্নীরা ১০৫০টাকা টিউশন ফি দিয়ে ১গ্লাস পানি খাওয়ার অধিকার নেই!! যদি না থাকে আপত্তি নেই, পানি খাওয়ানো সওয়াবের কাজ।৮মাস করোনায় আপনার নাত্নীরা স্কুলের ১গ্লাস পানিও খায় নাই।
শিক্ষকরা আমাদের সাথে খারাপ আচরন করলেও আমরা শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।কারন তারাই আমাদের সন্তানদের গড়ে তুলবেন আন্তরিকার সাথে নিজ সন্তানের মতো এই প্রত্যাসা।
তবে যারা বানিজ্য করে তাদের আমরা অসম্মান না করলেও সম্মান দিতে কষ্ট হয়।
মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় আপনি বার বার বলেন আদমজি, ক্যান্ট পাবলিক, শহীদ আনোয়ার ভিকারুনে বেতন অনেক বেশী,আমাদের কম।
মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়, আদমজি, ক্যান্ট পাবলিক, শহীদ আনোয়ার এরা সেনা অধ্যুসিত। তাদের টাকা পয়সার অভাব নেই।ভিকারুন নিসা উচ্চবিত্ত এলাকা, ওখানে শাসক মেনন সাহেব অন্য দলের।
অত্যন্ত স্বাভাবিক আপনি মিরপুরের অভিভাবক, গরীব মানুষের অভিভাবক, “আপনার তুলনা শুধুই আপনি”
আমাদের অসহায়ত্বের কথা আমরা তুলে ধরেছি সিদ্ধান্ত আপনার।
যুমে হোম টেষ্ট নেয়া ভালো সিদ্ধান্ত। তবে ৮০জনের মধ্যে ৩০থেকে ৪৫এর বেশী ক্লাস করেনা, আমি প্রতিদিন দেখি।
সবাইকে প্রমোশন দিয়ে দিন পূর্বের রোল অনুযায়ী।
কোনো অভিভাবকের সমস্যার আবেদন আপনি সরাসরি ড্রিল করুন।কারন সবাইকে আপনি চিনেন, মুখ দেখেই সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন ২মিনিটে।সবাই খুশিও হবে। মাসিক গভর্নিং মিটিংয়ে বহু এজেন্ডা থাকার কারনে এগুলি বাস্তবায়ন হয় না।
শিক্ষা সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনায় শিক্ষকদের অবহেলা জনিত কিছু সমস্যা আছে যাহা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হতে হতে একসময় বড় সমস্যা হয়।এগুলি ক্ষুদ্র অবস্থায়ই নিষ্পত্তি করা উচিত।এগুলি যে শিক্ষক সমস্যা করবে তার নিজ দায়িত্বে সমাধান করে দিবে, না করলে শাস্তির আওতায় আসবে।শিক্ষক মানুষ গড়ার কারিগর, কারিগর তার স্থাপত্যে নিজেই নিখুত তুলির কাজ করতে হয়।না হয় ফাঁকির স্পর্শ পড়বে শিক্ষাঙ্গনে।
মহামারী করোনায় যারা অসত ভাবে সিণ্ডিকেট বাজী করেছে আপনি তাদের উপর অসন্তুষ্ট।আমিও তাদের দলভুক্ত নই।
আরো কিছু আছে, স্ক্রীনে যায়গা না হওয়ার কারনে উপস্থাপন করা সম্ভব হলো না।
সবাই দোয়া করবেন।
প্রতিদিনবি২৪/সাইকা;
০১৭১১৩৩৬২৩৩।
Leave a Reply