অনলাইন ডেস্ক ;
রাজধানী বাসীর জন্য স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ সবজি সহজলভ্য করা এবং একই সঙ্গে কৃষকের জন্য উৎপাদিত পণ্যের সঠিক মূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাজধানীর সব ওয়ার্ডেই কৃষকের বাজার বসানোর উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এর আগে জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের সম্মিলিত উদ্যোগে রাজধানীর মিরপুরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে কৃষকের বাজার উদ্বোধন করা হয় গত সপ্তাহে। এরই মধ্যে এ বাজারটি আশেপাশের এলাকার মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
জানা গেছে, প্রতি শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে রাজধানীর নিকটবর্তী সাভারের বিরুলিয়া থেকে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত নিরাপদ সবজি ও ফল বাজারে এনে বিক্রি করেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের যাচাই করা নিরাপদ সবজি চাষিরাই এ বাজারে তাদের পণ্য বিক্রি করেন। এ উদ্যোগের ফলে ভোক্তারা সাশ্রয়ী মূল্যে তাদের প্রয়োজনীয় সবজি বাজার থেকে কিনতে পারবেন।
এ উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে বিপুল পরিমাণ শাকসবজি উৎপাদন হচ্ছে। কৃষকরা কৃষি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় জৈব সার ও জৈব বালাইনাশক পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে নিরাপদ সবজি উৎপাদন করছেন। কিন্তু বর্তমান বাজার ব্যবস্থার ফলে সঠিক মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা। অন্যদিকে ক্রেতারাও সাশ্রয়ী মূল্যে নিরাপদ সবজি পাচ্ছেন না। এ অবস্থায় ভোক্তার জন্য স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ সবজি সহজলভ্য করা, সেই সঙ্গে কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের সঠিক মূল্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই এ বাজার স্থাপন করা হয়। আগামীতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অন্যান্য ওয়ার্ডেও এ ধরনের বাজার বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
সাভারের বিরুলিয়া থেকে ৮ জন কৃষক তাদের উৎপাদিত নিরাপদ বিভিন্ন সবজি যেমন : ধুন্দল, চিচিঙ্গা, শসা, লাউশাক, পুঁই শাক, কলমি শাকসহ অন্যান্য ফসল খেত থেকে তুলে এনে বিক্রি করছেন।
এ বিষয়ে মোখলেসুর রহমান নামে এক কৃষক বলেন, এ বাজারের ফলে ক্রেতারা যেমন উপকৃত হবেন তেমনি আমাদের মতো কৃষকরাও উপকৃত এবং লাভবান হবেন। অন্য বাজার থেকে যদি একজন ক্রেতা ৬০ টাকা কেজিতে পটল কিনেন, তাহলে সেই ক্রেতা কৃষকের বাজার থেকে একদম টাটকা পটল ৪০-৫০ টাকায় কিনতে পারবেন। কারণ এখানে কোনো মধ্যস্বত্বভোগী নেই। আর একজন ক্রেতা সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ফসল কিনছেন। অন্যদিকে আমাদের মতো কৃষকরাও পাইকারি বাজারে যে দামে ফসল বিক্রি করছি এরচেয়ে তুলনামূলক বেশি দামে সরাসরি ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করতে পারছি। তাই এ ধরনের বাজার যত বাড়ানো যাবে ততই ভোক্তা ও কৃষকের লাভ হবে।
মিরপুর রূপনগর আবাসিক এলাকার বাসিন্দা ফরিদ উদ্দিন বলেন, প্রথম দিনেই কৃষকের বাজার থেকে নানান রকমের সবজি কিনেছি। টাটকা জিনিসের স্বাদই অন্য রকম। এ বাজারের মাধ্যমে কৃষকদের পাশাপাশি আমরাও উপকৃত হচ্ছি। তুলনামূলক কম দামে টাটকা সবজি কিনতে পারছি, অন্যদিকে কৃষকরাও ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন যা আগে সম্ভব হতো না। এ ধরনের বাজার ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সব এলাকায় স্থাপন করা উচিত। এতে সাধারণ মানুষ টাটকা এবং ভালো জিনিস খেতে পারবে। পাশাপাশি মধ্যস্বত্বভোগী অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম থেকে সাধারণ মানুষ মুক্তি পাবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তাইজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, নিরাপদ সবজি ক্রয়ের দিকে আমাদের মনোযোগ দিতে হবে। স্থানীয় বাসিন্দারা এ বাজার থেকে টাটকা শাকসবজি কিনতে পারবেন। পাশাপাশি কৃষকরাও উপকৃত হবেন।
এ বিষয়ে জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের ন্যাশনাল প্রোজেক্ট কো-অর্ডিনেটর জয়নাল আবেদীন বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৬নম্বর ওয়ার্ডে বাজারটি স্থাপন করেছি। এ কার্যক্রমটি সফল হলে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অন্যান্য এলাকায় এ রকম বাজার স্থাপন করা হবে।
প্রতিদিনবিডি২৪/টুম্পা ;
Leave a Reply